বাংলা ভাষায় ৩৭টি মূল ধ্বনিকে প্রকাশ করার জন্য রয়েছে ৫০টি মূল বর্ণ। এর মধ্যে অধিকাংশ বর্ণের উচ্চারণ মূল ধ্বনির অনুরূপ। কয়েকটি বর্ণের একাধিক উচ্চারণ রয়েছে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে একাধিক বর্ণের উচ্চারণ অভিন্ন। ধ্বনিগুলো দিয়ে শব্দ তৈরি হওয়ার সময়ে পাশের ধ্বনির প্রভাবে বর্ণের উচ্চারণ অনেক সময়ে বদলে যায়। এখানে বাংলা বর্ণের উচ্চারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
অ
অ বর্ণের উচ্চারণ দুই রকম: [অ] এবং [ও]। সাধারণ উচ্চারণ [অ], কিন্তু পাশের ধ্বনির প্রভাবে [অ] কখনো কখনো [ও]-এর মতো উচ্চারিত হয়।
অ বর্ণের স্বাভাবিক উচ্চারণ: অনেক [অনেক্], কথা [কথা], অনাথ [অনাথ্]।
অ বর্ণের [ও] উচ্চারণ: অতি [ওতি], অণু [ওনু], পক্ষ [পোক্খো], অদ্য [ওদ্দো], মন [মোন্]।
আ
আ বর্ণের স্বাভাবিক উচ্চারণ [আ]: আকাশ [আকাশ্], রাত [রাত্], আলো [আলো]।
আ] জ্ঞ-এর সঙ্গে থাকলে [অ্যা]-এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন জ্ঞান [গ্যাঁন্), জ্ঞাত [গ্যাঁতো], জ্ঞাপন [গ্যাঁপোন্]।
ই, ঈ
[ই] ধ্বনির হ্রস্বতা ও দীর্ঘতা বোঝাতে দুটি বর্ণ রয়েছে: ই এবং ঈ। কিন্তু বাংলা ভাষায় উভয় বর্ণের উচ্চারণ একই রকম: দিন [দিন], দীন [দিনো], বিনা [বিনা], বীণা [বিনা], হীন [হিনো]।
উ, উ
উ] ধ্বনির হ্রস্বতা ও দীর্ঘতা বোঝাতে দুটি বর্ণ রয়েছে: উ এবং উ। কিন্তু বাংলা ভাষায় উভয় বর্ণের উচ্চারণ একই রকম: উচিত [উচিত্], ঊষা [উশা], উনিশ [উনিশ্], ঊনবিংশ [উনোবিঙ্শো]।
ঋ
ঋ বর্ণের উচ্চারণ [রি]-এর মতো: ঋতু [রিতু], ঋণ [রিন্), কৃষক [ক্রিশক্], দৃশ্য [দ্রিশ্শো]।
এ
এ বর্ণের উচ্চারণ দুই রকম: [এ] এবং [অ্যা]। সাধারণ উচ্চারণ (এ), কিন্তু পাশের ধ্বনির প্রভাবে এ কখনো কখনো [অ্যা] উচ্চারিত হয়। এ বর্ণের স্বাভাবিক উচ্চারণ: একটি [এক্টি], দেশ [দেশ], এলো [এলো]।
এ বর্ণের [অ্যা] উচ্চারণ: একটা [অ্যাক্টা], বেলা [ব্যালা], খেলা [খ্যালা]।
ঐ
ঐ বর্ণের উচ্চারণ [ওই]: ঐকিক [ওই্কিক্], তৈল [তোই্লো]।
ও
ও বর্ণের উচ্চারণ [ও]: ওল [ওল্], বোধ [বোধ্]।
ঔ
ঔ বর্ণের উচ্চারণ [ওউ্]: ঔষধ [ওউ্শধ্], মৌমাছি [মোউ্মাছি]।
ব্যঞ্জনবর্ণগুলো সাধারণত নিজ নিজ ধ্বনি অনুযায়ী উচ্চারিত হয়। যেমন কলা, খর, বল, নাচ শব্দের ক, খ, ব, ন ইত্যাদি বর্ণের উচ্চারণ যথাক্রমে [ক], [খ], [ব], [ন] ইত্যাদি।
তবে কয়েকটি ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ নিজ নিজ ধ্বনি থেকে আলাদা। এ ধরনের কয়েকটি বর্ণের উচ্চারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ঞ
ঞ বর্ণের নিজস্ব কোনো ধ্বনি নেই। স্বতন্ত্র ব্যবহারে [অঁ-এর মতো আর সংযুক্ত ব্যঞ্জনে [ন্]-এর মতো উচ্চারিত হয়: মিঞা [মিয়াঁ], চঞ্চল [চন্চল্], গঞ্জ [গন্জো]।
ণ
ণ বর্ণের উচ্চারণ [ন্]: কণা [কনা], বাণী [বানি], হরিণ [হোরিন্]।
ব
ব বর্ণের সাধারণ উচ্চারণ [ব)। তবে ফলা হিসেবে এই বর্ণের উচ্চারণে স্বাতন্ত্র্য আছে।
শব্দের আদিতে ব-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন ত্বক [তক্], শ্বশুর [শোশুর্], স্বাধীন [শাধিন]।
শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে সেই ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়: অশ্ব [অশ্শো), বিশ্বাস [বিশ্শাশ্], পক্ক [পক্কো]।
ম
ম বর্ণের সাধারণ উচ্চারণ [ম]। শব্দের প্রথম বর্ণে ম-ফলা থাকলে সেই বর্ণ উচ্চারণের সময়ে ম-এর উচ্চারণ [অ]-এর মতো হয়, যেমন শ্মশান [শঁশান], স্মরণ [শঁরোন্]। শব্দের মধ্যে ম-ফলা থাকলে সেই বর্ণ উচ্চারণে দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য অনুনাসিক হয়, যেমন আত্মীয় [আত্তিঁয়ো], পদ্ম [পদ্দোঁ]। কিছু ক্ষেত্রে ম-ফলায় ম্- এর উচ্চারণ বজায় থাকে, যেমন যুগ্ম [জুগ্মো], জন্ম [জন্মো], গুল্ম [গুল্মো]।
য
য বর্ণের উচ্চারণ [জ]: যদি [জোদি], যিনি [জিনি], সূর্য [শুর্জো]। তবে য-ফলা থাকলে স্বরের উচ্চারণে পরিবর্তন হয়, যেমন যেমন ব্যতীত [বেতিতো], ব্যথা [ব্যাথা]। শব্দের মাঝখানে বা শেষে য-ফলা বর্ণের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ঐ বর্ণের উচ্চারণ দ্বিত্ব হয়, যেমন উদ্যম [উদ্দম্], গদ্য [গোদ্দো]। কিন্তু শব্দের মধ্যে বা শেষে যুক্তব্যঞ্জনের সঙ্গে থাকা ্য'-এর কোনো উচ্চারণ হয় না, যেমন সন্ধ্যা [শোন্ধা], স্বাস্থ্য [শাস্থো], অর্ঘ্য [অর্ঘো]।
র
র বর্ণের উচ্চারণ [র]। তবে র-ফলা হিসেবে এর উচ্চারণে বৈচিত্র্য আছে। শব্দের মধ্যে বা শেষে কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা থাকলে দ্বিত্বসহ র-ফলা উচ্চারিত হয়, যেমন- মাত্র [মাত্ত্রো], বিদ্রোহ [বিদ্দ্রোহো], যাত্রী [জাত্ত্রি]। কিন্তু শব্দের মধ্যে বা শেষে যুক্তব্যঞ্জনের সঙ্গে র-ফলা যুক্ত হলে দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না, যেমন – কেন্দ্র [কেন্দ্রো], শাস্ত্র [শাস্ত্রো], বস্ত্র [বস্ত্রো]।
শ, ষ, স
শ কখনো [শ]-এর মতো উচ্চারিত হয়, কখনো [স]-এর মতো উচ্চারিত হয়। স কখনো [শ]-এর মতো উচ্চারিত হয়, আবার কখনো [স]-এর মতো উচ্চারিত হয়। য বর্ণের উচ্চারণ সব সময়ে [শ]।
শ বর্ণের [শ] উচ্চারণ: শত [শতো], শসা [শশা]।
শ বর্ণের [স] উচ্চারণ: শ্রমিক [স্রোমিক্), শৃগাল [স্রিগাল্]।
ষ বর্ণের [শ] উচ্চারণ: ভাষা [ভাশা], ষোলো [শোলো]।
স বর্ণের [শ] উচ্চারণ: সাধারণ [শাধারোন্], সামান্য [শামান্নো]।
স বর্ণের [স] উচ্চারণ: আস্তে [আস্তে], সালাম [সালাম্]।
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন (✓) দাও।
১. ব-ফলার উচ্চারণ নেই কোন শব্দে?
ক. অশ্ব খ. পক্ব গ. বিশ্বাস ঘ. শ্বশুর
২. 'অদ্য' শব্দের উচ্চারণ -
ক. ওদ্দো খ. অদদো গ. অদ্দো ঘ. ওইদ্দো
৩. 'ঋণ'-এর উচ্চারণ -
ক. রিন্ খ. রিণ্ গ. ঋন্ ঘ. ঋণ
৪. কোন বর্ণটির নিজস্ব কোনো ধ্বনি নেই?
ক. ক্ষ খ. গ গ. ৎ ঘ. ঞ
৫. 'আ' কখনো অ্যা-এর মতো উচ্চারিত হয়, যেমন-
ক. রাত খ. কাতুকুতু গ. জ্ঞান ঘ. একা
৬. 'এ' বর্ণের বিবৃত উচ্চারণের উদাহরণ -
ক. একটি খ. এবার গ. দেশ ঘ. খেলা
Read more